রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ: নির্বাচনের সময় নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য


ছবি- সংগৃহীত 

শনিবার বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল পরামর্শ দিয়েছে যে ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্রীয় অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর একটি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন করা উচিত। ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পৃথক বৈঠকে দলগুলো এ পরামর্শ দেয়। একটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও পরামর্শ দিয়েছে।

'সংস্কার অপরিহার্য এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত  তবে এটি একটি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে হওয়া উচিত কারণ এই সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে তাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে,' লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অলি আহমদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন । তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত যাতে তারা কী সংস্কার করতে চায় এবং কোন সময়ের মধ্যে তা বিশদ বিবরণ দেয়।

বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, তার দল সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব করেছে। চুরি-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতির সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে হবে। এবং সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে ব্যর্থ হয়েছি। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরও আমরা দেশ গড়তে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, এবার আমরা ব্যর্থ হতে চাই না।

ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা শেষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার এবং প্রশাসন ও গণমাধ্যমসহ যারা তাদের সেবা করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তার দল নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালুর দাবি জানায়। 

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হল একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা যা প্রতিটি জেলায় তাদের ভোট দেওয়ার সংখ্যার অনুপাতে একাধিক প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এক তৃতীয়াংশ ভোটার যদি কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন, তাহলে দলের প্রার্থীরা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হন। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বিশ্বের গণতন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ নির্বাচনী ব্যবস্থা। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নিজাম-ই-ইসলামসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলোও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।

জুলাইয়ের ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় গণহত্যার জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারেরও দাবি জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, তার দল প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে চায়। তিনি বলেন, তার দল মনে করে এই সরকারের জন্য নির্বাচন ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক ইস্যু নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি আশা করে সরকার তাদের পরিকল্পনার একটি রূপরেখা দেবে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান জানান, ইউনূস দলের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চেয়েছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পুনর্বহালসহ ২০টি প্রস্তাব। বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রশ্ন তোলা হয়।

এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন ১১টি রাজনৈতিক দল ও জোট। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সংবিধান পুনর্লিখন বা সংশোধন করা উচিত কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সব দলের কাছে কী চান তা জিজ্ঞেস করছেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের রূপরেখা, নির্বাচন, ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া জানতে চায়। আগামীতে বাংলাদেশের রূপরেখা কী হবে তা দ্রুত জাতির সামনে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা। সংবিধান সংস্কার করা হবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মাহফুজ আরও বলেন, সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের মেয়াদ নির্ধারণ করা হবে এবং প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংস্কারের রূপরেখা দেবেন।


শেয়ার করুন

0 coment rios: