রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

পুলিশ হত্যা মামলায় ১৭ বছরের ছাত্র ৭ দিনের রিমান্ডে: শিশু আইনের বিধান কি?

১৭ বছরের ছাত্র ফাইয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ হত্যা মামলায় ১৭ বছরের শিশু হাসানতুল ইসলাম ফাইয়াজ এর বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ঢাকার একটি নিম্ন আদালত। আইনজীবী শিশু আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে ১৮ বছরের কম বয়সীদের একটি কিশোর আদালতে বিচার করা উচিত।

জন্ম নিবন্ধন অনুসারে, হাসানতুল ইসলাম ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছরের কিছু বেশি কারণ তিনি ১৯ এপ্রিল, ২০০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ঢাকার মাতুয়াইল এর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের অধীনে গোল্ডেন এ+ অর্জন করেছিলেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ আন্দোলনে মাতুয়াইল হাসপাতালের কাছে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৭ জনের মধ্যে তাকে ১৬তম আসামি করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যকে হত্যা, লাশ গোপন ও মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি হিসেবে ফাইয়াজকে আজ রাজধানীর নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়েছে।

মামলায় ফাইয়াজের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৯ বছর। ফাইয়াজের আইনজীবী ইস্তিয়াক হোসেন  বলেন, "জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী ফায়াজের বয়স ১৭ বছর, ৩ মাস ও ৮ দিন। মামলায় পুলিশ ফায়াজের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আমরা প্রতিবাদ করি। তার বয়সের কারণে আপাতত রিমান্ড না দিয়ে মামলাটি নথিভুক্ত রেখে বয়স প্রমাণের অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে শিশু কারাগারে প্রেরণের অনুরোধ করআ হলেও আদালত তা করতে অপারগতা প্রকাশ করে।

তিনি বলেন, "এই প্রেক্ষাপটে, আমরা অনুরোধ করেছি যে রিমান্ড মঞ্জুর করার পরিবর্তে, মামলা নথিভুক্ত করা হোক, এবং তার বয়স প্রমাণের অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করা হোক, এবং তাকে একটি কিশোর আটক কেন্দ্রে পাঠানো হোক। এটা করতে অপারগতা এবং সাত দিনের রিমান্ড  মঞ্জুর করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি ফাইয়াজের সাত দিনের রিমান্ড যুক্তিসঙ্গত নয়।"

উল্লেখ্য, যদি কারো বয়স ১৮ বছরের কম হয়, ২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী, তাকে শিশু হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং উক্ত আইনে তার বিচার করতে হবে। কেননা, শিশু আইন, ২০১৩ এর ৪ ধারা মোতাবেক  অনুর্ধ্ব ১৮ (আঠার) বৎসর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসাবে গণ্য হবে এবং একই আইনের ১৫ক (ক) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, শিশু কর্তৃক সংঘটিত অপরাধ বিচারের জন্য মামলাটি প্রয়োজনীয় কাগজাদিসহ শিশু আদালতে প্রেরণ করতে হবে। এমনকি যদি কারো বয়স জন্ম সনদ মোতাবেক ১৮ বছরের উপরে হয় কিন্তু তিনি ১৮ বছরের কম বলে দাবি করেন, বয়স যাচাই না হওয়া পর্যন্ত তাকে বিচারের আওতায় আনা যাবেনা।

শিশু আইনের ৪৪ ধারায় শর্ত থাকে যে, গ্রেফতার করার পর কোন শিশুকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো যাবে না কিন্তু প্রকাশিত ভিডিওতে এটা প্রতীয়মান যে, পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করেন। এছাড়া, ৪৪ ধারার (৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা, উক্ত সনদের অবর্তমানে স্কুল সার্টিফিকেট বা স্কুলে ভর্তির সময় প্রদত্ত তারিখসহ প্রাসঙ্গিক দলিলাদি উদ্‌ঘাটনপূর্বক যাচাই-বাছাই করিয়া তার বয়স লিপিবদ্ধ করবেন। 

সুতরাং, বয়স প্রমাণের অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ না করা এবং ৫ ধারার অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রবেশন কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ না করে  নিম্ন আদালত কর্তৃক ১৭ বছরের ফাইয়াজের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড  মঞ্জুরের আদেশ শিশু আইনের পরিপন্থী এবং বিজ্ঞ আদালতের এই আদেশের মাদ্ধমে তার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে।  


শেয়ার করুন

0 coment rios: