শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং গণঅভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়ে সোমবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং ছাত্র আন্দোলন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন পরের দিন সংসদ ভেঙে দেন।
এছাড়া ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। আন্দোলনের সমন্বয়কদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে মঙ্গলবার চূড়ান্ত করা হয়। অন্য সদস্যদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেই সরকার গঠন করা হবে।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে এই ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন বিধান নেই বরং এটি শুধুমাত্র নির্বাচিত সরকারকে বৈধতা দেয়। হঠাৎ করে নির্বাচন ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে বৈধ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লখ্য, বর্তমান সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো বিধান নেই কেননা, সংবিধানের ৫৮ ক, ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ এবং ৫৮ঙ এ উল্লিখিত "তত্ত্বাবধায়ক সরকার" এর বিধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩ তম সংশোধনীর দ্বারা বিলুপ্ত করা হয়। .
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বা পরে নির্বাচিত সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। উক্ত নির্বাচত সরকার তখন বিজয়ী রাজনৈতিক দল বা জোটের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রয়াত বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার উদাহরণ উল্লেখ করেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে এই জাতীয় বিধান একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুশীলন করা যেতে পারে তবে ভবিষ্যতে এর সাংবিধানিক বৈধতা প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এ প্রসঙ্গে বলেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশ ও জনগণের স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিধান তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তবে ভবিষ্যতে এর সাংবিধানিক বৈধতা প্রয়োজন। তিনি ১৯৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের অস্থায়ী সরকারের প্রধান হওয়ার নজিরও উল্লেখ করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের পতনের পর গণঅভ্যুত্থানের ফলে পঞ্চম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিন মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব দলের ঐক্যমতের মধ্য দিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের অধীনে একটি অন্তর্বর্তী বা অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। পরবর্তীতে, অস্থায়ী সরকারকে ১৯৯১ সালে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পঞ্চম সংসদে ১১তম সংশোধনীর মাধ্যমে সাংবিধানিক বৈধতা দেওয়া হয়।
0 coment rios: