গত
২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে প্রাণ হারান আবুল কালাম। ঘটনার দুই দিন পর থেকেই সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে একটি পোস্ট, যেখানে দাবি করা হয়— কালামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নমিনি তার বোন, ফলে তার স্ত্রী উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
এই
বিষয়ে নিহতের স্ত্রী আইরিন, বোন লাইজু আক্তার এবং আইরিনের খালাতো ভাই আরিফ হোসেন জানিয়েছেন, ভাইরাল পোস্টটি সম্পূর্ণ ভুল ও বিভ্রান্তিকর, যা
তাদের পরিবারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেখা করলে আইরিন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কালামের ব্যাংক হিসাবের নমিনির বিষয়ে তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কেউ কোনো কথা বলেনি।’
তিনি
জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর মরদেহ শহীদ
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়। আইরিন বলেন, ‘এ সময় তার
ব্যবহার করা মুঠোফোন, পাসপোর্ট এবং সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ পুলিশের জিম্মায় দেয়া হয়।’ তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে থাকা অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা তেজগাঁও থানায় গিয়ে পুলিশ থেকে কালামের সব জিনিসপত্র বুঝে
নেন।
আইরিন
বলেন, ‘জিনিসপত্রগুলো আমার ননদ লাইজু আক্তারের কাছে তুলে দেয়া হয়। এরপর আমি নিজেই কালামের ফোন হাতে পাই। তিনি আরও বলেন, ‘কামালের তিনটি ব্যাংকে হিসাব ছিল। তবে এসব ব্যাংকে কত টাকা আছে,
তা আমি জানি না। আর নমিনি কে,
সেটাও আমি বলতে পারব না।’
এই
প্রসঙ্গে আইরিনের খালাতো ভাই আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা কাউকেই বলিনি যে আবুল কালামের
নমিনি তার বোনেরা। এটি একটি ভুল তথ্য, যা ঘুরে বেড়াচ্ছে
বিভিন্ন পেজে। এ নিয়ে আমরাও
কিছুটা বিব্রত।’ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কোনো ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের ‘নমিনি’ সংক্রান্ত তথ্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এবং ব্যাংকগুলো তা কোনো তৃতীয়
পক্ষের কাছে প্রকাশ করে না। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমেও কালামের হিসাবের নমিনি কে, তা জানা সম্ভব
হয়নি।
নবিষয়টি
নিয়ে নিহতের ছোট বোন লাইজু আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই বিয়ের আগে যেসব অ্যাকাউন্ট খুলেছিল, সেখানে বোনদের নমিনি করেছে। কিন্তু বিয়ের পর আমরাই বলে
তার নমিনি পরিবর্তন করেছি। আমার ভাইয়ের জমি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নমিনি তার স্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘বোনদের নমিনি রাখার কথা ভুল তথ্য। অথচ এ তথ্যই ছড়িয়ে
পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।’
স্বজনদের
বরাত জানা গেছে, কিশোর বয়সেই মা–বাবাকে হারান
আবুল কালাম। ভাইবোনদের সংসারেই তার বেড়ে ওঠা। চার ভাই ও ছয় বোনের
মধ্যে ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট। ২০১২ সালে তিনি মালয়েশিয়া যান এবং ফিরে এসে ২০১৮ সালে আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি ছয় বছরের ছেলে
ও চার বছর বয়সী মেয়েসন্তান রয়েছে।
0 coment rios: