বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নতুন আইনি ভিত্তি পাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার


ছবিঃ সংগৃহীত 

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ১৯ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক পরিচালিত কঠোর দমন-পীড়ন ও গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভগুলি বিভিন্ন রাজনৈতিক পটভূমি থেকে ছাত্র এবং নাগরিকদের একত্রিত করে।

আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারের পদত্যাগের ডাক দেয় ঐক্যবদ্ধ ছাত্র ও গণঅভ্যুত্থান। ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগ করেন। পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলা, জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা, অর্থনীতির কার্যকারিতা বজায় রাখা এবং নির্বাহী শাসনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্টের মতামত তলব করেন।

অনুচ্ছেদ ১০৬ এর অধীনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৮ আগস্ট বিশেষ রেফারেন্স নং ০১-২০২৪ এর মাধ্যমে তার মতামত প্রদান করে, এই বলে যে, "সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণ করতে, রাষ্ট্রপতি জরুরি পরিস্থিতিতে, একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসাবে রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য সম্পাদনের জন্য একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিয়োগ করত প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ করাতে পারেন।"

এ ছাড়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাংবিধানিক সংকট নিরসনে সর্বস্তরের জনগণের আন্তরিক ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ৮ আগস্ট প্রয়োজনীয় মতবাদের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। ছাত্র-জনগণের জোটের প্রতিনিধিদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এবং রাষ্ট্রের সংস্কার আকাঙ্খা পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা ও দায়িত্ব, প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা, তাদের পদত্যাগ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। উপদেষ্টা পরিষদ 'অন্তবর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪'-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন আইনি ভিত্তি পাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে গেলে বা অধিবেশন চলমান না থাকলে জরুরি প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন রাষ্ট্রপতি। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এখন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ অধ্যাদেশ জারি করবেন।

সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিতে পারিবেন।” জারি হওয়ার সময় থেকে ‘অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে সংবিধানে।


শেয়ার করুন

0 coment rios: